আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের নাম ছিল আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপ। ২০০০ সালে নকআউট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। দুই যুগ পর সেই হারের প্রতিশোধ নিলো ভারত। কিউইদের ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তাতে সর্বশেষ আসরে পাকিস্তানের কাছে হারানো শিরোপা এবার পুনরুদ্ধার করল রোহিত শর্মার দল।
ফাইনালে ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য যে সংগ্রহ প্রয়োজন ছিল, ব্যাট হাতে সেটা পায়নি নিউজিল্যান্ড। আর বল হাতেও শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। কিন্তু চিরায়ত লড়াকু মানসিকতার কিউইরা লড়াই করেছে একদম শেষ পর্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে এবং কিপটে বোলিংয়ে চাপও সৃষ্টি করেছে। তবে রোহিত শর্মা, শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুলদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের কারণে সেই চেষ্টা ভেস্তে গেছে কিউইদের। মিচেল স্যান্টনারদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন রোহিত শর্মার ভারত।
দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে ভারত। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।
কিউইদের দেয়া মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত শুরু পায় ভারত। পাওয়ারপ্লেতে ম্যাট হেনরির অনুপস্থিতি ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল। শুরু থেকেই স্বভাবজাত ঝোড়ো ব্যাটিং করেছেন রোহিত শর্মা। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন শুভমান।
পাওয়ারপ্লের পরেও দেখেশুনেই খেলেছে ভারত। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার পার করেন শতরান। তবে ‘গ্লেন ফিলিপস ইফেক্ট’ এড়াতে পারেনি রোহিত শর্মারা। ১৯ তম ওভারে মিচেল স্যান্টনারের বল শর্ট এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে চিপ করতে চেয়েছিলেন গিল। তবে ফিলিপসকে ফাঁকি দেয়া অসাধ্য প্রায় ব্যাপার। দুর্দান্ত এক ক্যাচে গিলকে সাজঘরে ফেরান এই ফিল্ডার।
গিলের বিদায়ের ২ বল পরেই আরেকটি ধাক্কা খায় ভারত। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন বিরাট কোহলি। কিউইদের ক্রমবর্ধমান স্পিন চাপে দারুণ শুরু করা রোহিতও আর টিকতে পারেননি। ৩ ছক্কা আর ৭ চারে ৮৩ রান করা এই ব্যাটার ফেরেন সামনে এগিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে। রাচিন রবীন্দ্রের বলে তিনি যখন ফেরেন, তখন দলের সংগ্রহ ১২২ রান।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রায় প্রতিটি ম্যাচে দলের হাল ধরেছেন শ্রেয়াস আইয়ার। ফাইনালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চাপের মুহূর্তে অক্ষরের সঙ্গে গড়েন ৬১ রানের জুটি। এই জুটিই মূলত লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়েছে ভারতকে। কারণ ৬২ বলে ৪৮ রান করে আইয়ার যখন ফেরেন তখন জয় থেকে কেবল ৬৯ রান দূরে ভারত।
এই অল্পে রানেও ভালোই চাপ তৈরি করেছিল নিউজিল্যান্ড। ৪০ বলে ২৯ রান করে অক্ষর প্যাটেল যখন ফেরেন, তখন প্রতিযোগিতা জমে উঠেছিল আবার। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়া এবং লোকেশ রাহুলের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে সহজেই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ভারত।
এর আগে দুবাইয়ের বোলিং সহায়ক উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ের শুরুটা দারুণ করেছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম ৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫১ রান করে কিউইরা। তবে শুরুর সেই দাপট ধরে রাখতে পারেননি কিউই ব্যাটাররা। পেসারদের সরিয়ে দেয়ার পর স্পিনাররা এসে ভারতকে চালকের আসনে বসান।
শুরুটা করেন বরুণ চক্রবর্তী। অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে উইল ইয়াংকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন এই রহস্য স্পিনার। ২৩ বলে ১৫ রান করে এলবিডব্লিউ হন ইয়াং।
ইয়াংয়ের বিদায়ের পরই কিউইদের আরও চেপে ধরে ভারত। দুই প্রান্ত থেকে স্পিন বোলিং এনে চাপ বাড়াতে থাকেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সাফল্যও এসেছে তাৎক্ষণিকভাবেই। একাদশ ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই প্রথম বলেই ইনফর্ম রাচিন রবীন্দ্রকে ফেরান কুলদীপ যাদব। ২৯ বলে ৩৭ রান করেন রবীন্দ্র।
চাপের মুহূর্তে কিউইদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার কেইন উইলিয়ামসন হাল ধরতে পারেননি আজ। কুলদীপের বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ৩৩ রানের জুটি গড়েন টম লাথাম এবং ড্যারেল মিচেল। লাথামকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে এই জুটি ভাঙেন জাদেজা।
ভারতীয় স্পিনের সামনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বিধ্বংসী ব্যাটার গ্লেন ফিলিপসও। ড্যারেল মিচেলের সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়লেও রান এগিয়েছে খুব ধীরগতিতে। বরুণ চক্রবর্তীর বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৫২ বলে ৩৪ রান করেছেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই ব্যাটার।
তবে এক প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও অন্য প্রান্তে আগলে ব্যাটিং করেছেন মিচেল। ৪৬ তম ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে আউট হওয়ার আগে ১০১ বলে ৬৩ রান করেন তিনি। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ব্রেসওয়েল। ৪০ বলে তার ৫৩ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ২৫১ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। তবে সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
ভারতের হয়ে বল হাতে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ যাদব এবং বরুণ চক্রবর্তী। মোহাম্মদ শামি এবং জাদেজা নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
খুলনা গেজেট/এমএম